হাসেম ফুডসের কারখানায় অগ্নিকাণ্ডে ৫২ জনের লাশ উদ্ধার, পুলিশ মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে

তারিখ:

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের কর্ণগোপের হাসেম ফুডসের কারখানায় গত ৮ জুলাই বৃহস্পতিবার বিকেলে ভয়াবহ আগুন লাগে। কারখানায় প্রচুর পরিমাণ দাহ্য পদার্থ থাকায় ফায়ার সার্ভিসের ১৮টি ইউনিটের ২০ ঘণ্টা চেষ্টার পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। এরপরেই শুক্রবার (০৯ জুলাই) দুপুরে ভবন থেকে একে একে ৪৯টি মরদেহ উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিস। এখনও ওই ভবনে ফায়ার সার্ভিস কাজ করছে।

হাসেম ফুডসের কারখানায় বৃহস্পতিবার বিকাল সাড়ে ৫টায় যখন আগুনের সূত্রপাত হয় তখন কারখানার ছয়তলা ভবনটিতে প্রায় চারশ’র বেশি কর্মী কাজ করছিলেন। বিশাল কারখানা ভবন থেকে মাত্র দুটি পথ (সিঁড়ি) ছিলো বের হওয়ার। তীব্র তাপ ও ধোঁয়ার কারণে কেউ ভবনের পেছনের পথ দিয়ে বের হতে পারছিলেন না। এদিকে ভবনের সামনের পথ দিয়ে আগুন ছড়িয়ে পড়ায় সে পথও ব্যবহারের উপায় ছিল না। ফলে শ্রমিকেরা ছাদের দিকে ছুটতে থাকেন। কিন্তু সবাই ছাদ পর্যন্ত পৌঁছানোর আগেই মৃত্যু এসে হাজির হয়। কারখানায় প্লাস্টিক, কাগজসহ মোড়কিকরণের প্রচুর সরঞ্জাম থাকায় আগুন মুহূর্তে ছড়িয়ে পড়ে। অগ্নিকাণ্ডের শুরুর দিকে আগুন থেকে বাঁচতে লাফিয়ে পড়ে তিনজন নিহত হয়েছে। তারা হলেন- স্বপ্না রানী (৪৪), মিনা আক্তার (৩৪) ও মোরসালীন (২৮)। ওই ভবনের চারতলা থেকে ৪৯ জনের উদ্ধারকৃত লাশের ভিতরে নারী ছিলেন ২৬ জন। সব মিলিয়ে এই ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৫২ জনের প্রাণহানি হয়েছে।

অনেক মানুষ ছাদে উঠে প্রাণরক্ষা করতে পারতেন যদি না কারখানা ভবনের চারতলায় ছাদে ওঠার সিঁড়ির মুখের দরজাটি তালা বন্ধ না থাকতো।

কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় প্রায় অর্ধশতাধিক ব্যক্তি নিখোঁজ রয়েছেন। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ঘটনা তদন্তে কমিটি গঠন করা হয়েছে। শ্রমিক এবং তাদের স্বজনরা ছাড়াও ফায়ার সার্ভিসের সূত্র বলছে, অনেক মানুষ ছাদে উঠে প্রাণরক্ষা করতে পারতেন যদি না কারখানা ভবনের চারতলায় ছাদে ওঠার সিঁড়ির মুখের দরজাটি তালা বন্ধ না থাকতো।

মরদেহ থেকে দাঁত ও হাড় সংগ্রহ করব। দাঁত ও হাড়ের মাধ্যমে ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে শনাক্ত করতে কমপক্ষে ২১ দিন সময় লাগবে।

– সিআইডির বিশেষ সুপার (ফরেনসিক) রোমানা আক্তার

অধিকাংশ মরদেহ বেশি পুড়ে যাওয়াতে তাঁদের শনাক্ত করা সম্ভব হচ্ছে না। যে কারণে স্বজনদের কাছে লাশগুলো হস্তান্তর করা যায়নি। লাশগুলো সংরক্ষণের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে এবং জায়গা সংকুলান না হওয়াতে বাকি ১৫ জনের মরদেহ শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠানো হয়েছে। নিহতদের পরিচয় শনাক্ত করতে ডিএনএ পরীক্ষার জন্য মৃতদেহগুলোর নমুনা সংরক্ষণ করা হচ্ছে এবং পরীক্ষার পর লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হবে। সিআইডির বিশেষ সুপার (ফরেনসিক) রোমানা আক্তার সাংবাদিকদের বলেন, ‘মরদেহ থেকে দাঁত ও হাড় সংগ্রহ করব। দাঁত ও হাড়ের মাধ্যমে ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে শনাক্ত করতে কমপক্ষে ২১ দিন সময় লাগবে।’

যেহেতু ৫২ শ্রমিক প্রাণ হারিয়েছেন সেহেতু এটি হত্যা মামলা হবে এবং পুলিশ বাদী হয়ে এ মামলা করবে।

– পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জায়েদুল আলম

অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় এখন পর্যন্ত নিহত শ্রমিকদের পক্ষ থেকে কেউ কোনো অভিযোগ দেননি। তবে নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জায়েদুল আলম বলেন, হাসেম ফুডসের কারখানায় (সেজান জুসের কারখানায়) ৫২ শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনায় মামলার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমরা। যেহেতু ৫২ শ্রমিক প্রাণ হারিয়েছেন সেহেতু এটি হত্যা মামলা হবে এবং পুলিশ বাদী হয়ে এ মামলা করবে। মামলার পর বিষয়টি তদন্ত করে অভিযুক্তদের আইনের আওতায় আনা হবে।

এদিকে জেলা প্রশাসন এ ঘটনায় পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। এছাড়া গুরুতর আহতদের পরিবারকে ১০ হাজার টাকা এবং নিহত প্রত্যেকের পরিবারকে লাশ দাফনের জন্য ২৫ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে।

***পীরগঞ্জ টোয়েন্টিফোরে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।***

শেয়ার করুন:

Subscribe

জনপ্রিয়

এমন আরও
সম্পর্কিত

সওজ প্রকৌশলী ও তার স্ত্রীর অবৈধ সম্পদ ১২ কোটি টাকার

প্রায় সাড়ে ১২ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন ও...

ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে বেরোবি শিক্ষার্থী তুষারের আত্মহত্যা

রংপুরের সাহেবগঞ্জের তিনমাথার মোড় এলাকার বাসিন্দা এবং বেরোবির শিক্ষার্থী...

বিজ্ঞাপনসহ বিদেশি চ্যানেলগুলোর সম্প্রচার বন্ধ

দেশে সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী বিজ্ঞাপনসহ বিদেশি চ্যানেলগুলোর অনুষ্ঠান প্রচার...

রংপুরে মাদকসেবীর ছুরিকাঘাতে এএসআই নিহত

রংপুরে মাদকসেবীর ছুরিকাঘাতে পুলিশের সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) পিয়ারুল ইসলাম...