হুমায়ুন আজাদের ৬৯তম জন্মবার্ষিকী আজ

তারিখ:

আজ বাংলা সাহিত্যের প্রথা ভাঙ্গার রূপকার বহুমাত্রিক জ্যোতির্ময় হুমায়ুন আজাদের ৬৯তম জন্মবার্ষিকী

বাংলা সাহিত্যে প্রথাবিরোধী লেখক হুমায়ুন আজাদের জন্ম ১৯৪৭ সালের ২৮ এপ্রিল মুন্সীগঞ্জের রাঢ়িখাল গ্রামে। তাঁর সমস্ত বই, প্রবন্ধ, কবিতা সৃষ্টি হয়েছে প্রথাকে অস্বীকার করে। তার প্রবচনগুচ্ছ এদেশের যুক্তিবাদী পাঠক সমাজকে করে তুলেছে সচেতন।

কবি, ভাষাবিজ্ঞানী, ঔপন্যাসিক, গবেষক, কিশোর সাহিত্যিক হুমায়ুন আজাদ আশির দশক থেকেই ব্যাপক পাঠকগোষ্ঠীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। প্রথা, প্রতিষ্ঠান, সংস্কারবিরোধিতা, নারীবাদী, রাজনৈতিক বক্তব্য ও নির্মোহ সমালোচনার জন্য তিনি আলোচিত ও সমালোচিত ছিলেন।

জন্ম তারিখ ১৩৫৪ সালের ১৪ বৈশাখ, ইংরেজি ১৯৪৭ -এর ২৮এপ্রিল। তার আসল নাম হুমায়ুন কবীর, পরে হুমায়ুন আজাদ নামে লেখালেখি শুরু করেন। তাঁরা তিন ভাই দুই বোন। ছোটবেলা থেকে বই পড়া ছিল তাঁর নেশা। লেখালেখির শুরুও ছোটবেলা থেকেই। তাঁর বাবা আবদুর রাশেদ প্রথমে শিক্ষকতা করলেও পরে পোস্টমাস্টারের চাকরিতে যুক্ত হন। মা জোবেদা খাতুন ছিলেন গৃহিণী।

হুমায়ুন আজাদ প্রথম উপন্যাস লেখা শুরু করেন ক্লাস নাইনে পড়ার সময়। শৈশবের পড়ার ঘরের সামনে ছিল একটি কদম গাছ। বর্ষায় ফুল ফুটে গাছটি রূপসী হয়ে উঠতো। এটিকে নিয়েই তিনি প্রথম উপন্যাস লিখতে শুরু করেছিলেন। ছোটবেলায় শরৎচন্দ্রের গৃহদাহ ও দত্তা উপন্যাস পড়ে আপ্লুত হয়েছিলেন তিনি।

নবম শ্রেণীতে পড়ার সময় কবিতা লেখার শুরু। কিন্তু প্রথম ছাপা হয়েছিল গদ্য-কচিকাচার আসরে। কচুরিফুল ছিল তাঁর চোখে সবচেয়ে সুন্দর ফুল! বর্ষায় পুঁটি মাছের রূপালি ঝিলিক তাঁর চোখে ছিল অপরুপ সৌন্দর্য।

১৯৬২ সালে ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। পরে ঢাকা কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা পাস করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর উভয়টিতেই প্রথম স্থান অধিকার করেন ১৯৬৭ ও ১৯৬৮ সালে। এরপর স্কটল্যান্ডের এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘বাংলা ভাষার সর্বনামীয়করণ’ বিষয়ের ওপর পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন।

কর্মজীবন শুরু করেন ১৯৬৯ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভাষক হিসেবে। পশ্চিমা ভাষাবিজ্ঞানী চমস্কি উদ্ভাবিত তত্ত্ব নিয়ে তিনি বাংলা বাক্যতত্ত্বের গবেষণা করেন।

হুমায়ুন আজাদের মধ্যে ছিল বহুমাত্রিক সত্তা। একদিকে তিনি ভাষা বিজ্ঞানী, আবার একই সঙ্গে কবিতা, উপন্যাস লিখে হয়েছেন সাহিত্যিক। হুমায়ুন আজাদ মূলত একজন কবি ছিলেন। যদিও তিনি সাহিত্যে বিভিন্ন শাখায় সফলভাবে বিচরণ করেছেন। কিন্তু তাঁর কবিসত্ত্বাটি কখনো তাঁকে ত্যাগ করেনি। লেখাগুলো বিশ্লেষণ করলেই বুঝা যায় তিনি অতিমাত্রায় শব্দ সচেতন, যা একজন কবির অনিবার্য গুণ। তাই তিনি শব্দকেই বেছে নিয়েছিল অব্যর্থ অস্ত্র হিসাবে এবং এখানেও তাঁকে ফল বলেছেন বিদগ্ধজনেরা।

বিজ্ঞানের যুগে মধ্যযুগীয় বিশ্বাসকে ঘৃণা করতে তিনি। ৫৮ বছর বয়সে ক্লান্তিহীনভাবে তিনি সৃষ্টি করেছেন ৬০টির বেশি গ্রন্থ।

হুমায়ুন আজাদের উপন্যাস ‘পাক সার জমিন সাদ বাদ’ প্রকাশের পর থেকেই তিনি ধর্মীয় মৌলবাদী গোষ্ঠির রোষানলে পড়েন। এ উপন্যাসটি প্রকাশের পর সংবাদপত্র কিংবা মিছিলে মিটিং তাঁকে নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা হয়েছে।

২০০৪ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় একুশে বইমেলা থেকে বের হয়ে বাসায় ফেরার পথে তাঁর উপর শারিরীক আক্রমণ করেন ধর্মীয়-উগ্রবাদীরা। গুরুতর অবস্থায় তাঁকে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের আন্দোলনের মুখে সরকার তাঁকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরের বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে পাঠায়।

আরও পড়তে পারেন: সমকামী অধিকারকর্মীসহ দুজনকে কুপিয়ে হত্যা

সুস্থ হয়ে ২০০৪-এর ৭ আগস্ট গবেষণা বৃত্তি নিয়ে জার্মানি যান। ১১ আগস্ট রাতে জার্মান কবি-সাহিত্যিক-শিল্পীদের দেওয়া একটি পার্টি থেকে ভালোভাবেই নিজের ফ্ল্যাটে ফিরেন। ১২ আগস্ট ভোরে ফ্ল্যাটের নিজ কক্ষে তাঁকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। হুমায়ুন আজাদের এই মৃত্যু নিয়েও নানা রহস্য রয়েছে।

তিনি ১৯৮৬ সালে পেয়েছেন বাংলা একাডেমী পুরস্কার, ‘অগ্রণী শিশু-সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮৬), মার্কেন্টাইল ব্যাংক পুরস্কার (২০০৪) এবং ২০১২ সালে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পুরস্কার একুশে পদক (মরণোত্তর) পেয়েছেন তিনি।

হুমায়ুন আজাদের উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে ‘অলৌকিক ইস্টিমার’, ‘লাল নীল দীপাবলি (বাঙলা সাহিত্যের জীবনী)’ ‘জ্বলো চিতাবাঘ’, ‘শামসুর রাহমান-নিঃসঙ্গ শেরপা’, ‘Pronominalization in Bengali’ ‘বাঙলা ভাষার শত্রুমিত্র’, ‘বাক্যতত্ত্ব’, ‘সবকিছু নষ্টদের অধিকারে যাবে’, ‘ফুলের গন্ধে ঘুম আসেন’, ‘কতোনদী সরোবর (বাঙলা ভাষার জীবনী)’, ‘ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইল’, ‘আমাদের শহরে একদল দেবদূত’, ‘আমার অবিশ্বাস’, ‘সীমাবদ্ধতার সূত্র’, ‘নারী’, ‘দ্বিতীয় লিঙ্গ’, ‘আধার ও আধেয়’, ‘আমরা কি এই বাঙলাদেশ চেয়েছিলাম’, ‘মানুষ হিসাবে আমার অপরাধ সমূহ’, ‘কবি অথবা দন্ডিত অপুরুষ’, পাক সার জমিন সাদবাদ প্রভৃতি।

***পীরগঞ্জ টোয়েন্টিফোরে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।***

শেয়ার করুন:

Subscribe

জনপ্রিয়

এমন আরও
সম্পর্কিত

সওজ প্রকৌশলী ও তার স্ত্রীর অবৈধ সম্পদ ১২ কোটি টাকার

প্রায় সাড়ে ১২ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন ও...

ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে বেরোবি শিক্ষার্থী তুষারের আত্মহত্যা

রংপুরের সাহেবগঞ্জের তিনমাথার মোড় এলাকার বাসিন্দা এবং বেরোবির শিক্ষার্থী...

বিজ্ঞাপনসহ বিদেশি চ্যানেলগুলোর সম্প্রচার বন্ধ

দেশে সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী বিজ্ঞাপনসহ বিদেশি চ্যানেলগুলোর অনুষ্ঠান প্রচার...

পঙক্তির বেশে – তাহসীন জাওয়াদ

কত রঙিন এসব অগোছালো রঙঅস্ফুটস্বরে সবই আজ একাকারযাদের মাঝে...