দেশের সর্ববৃহৎ ঈদের জামায়াত কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া মাঠের কাছে বিস্ফোরণ ও গুলির ঘটনা ঘটেছে আজ বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে নয়টার দিকে। এতে দুই পুলিশসহ নিহতের সংখ্যা বেড়ে চারজনে পৌঁছেছে। আহত হয়েছেন প্রায় ১২ জন। তাঁদের মধ্যে বেশির ভাগই পুলিশ। এ ঘটনায় দুজনকে আটক করা হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
কিশোরগঞ্জের সহকারী পুলিশ সুপার (সদরদপ্তর ) ওবায়দুল হাসান জানান, শোলাকিয়া মাঠের আড়াইশ মিটারের মধ্যে আজিমুদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের ফটকের কাছে নিরাপত্তার দায়িত্বরতি পুলিশ সদস্যদের ওপর এই হামলার ঘটনা ঘটে।
পরে হামলাকারীদের সঙ্গে পুলিশের ব্যাপক গোলাগুলি হয়। সে সময় সন্দেহভাজন এক হামলাকারী নিহত হন বলে কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার আনোয়ার হোসেন খান বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানান।
আরও পড়তে পারেন: বাংলাদেশে আরো হামলার হুমকি: গুলশানে হামলাকারীদের প্রশংসায় আইএস-এর ভিডিওবার্তা
গোলাগুলির মধ্যে ঝর্ণা রানী ভৌমিক নামে স্থানীয় এক নারীও আহত হয়েছেন বলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল নিশ্চিত করেছেন। হামলার পর পুলিশসহ ১০ জনকে আহত অবস্থায় কিশোরগঞ্জ জেলা হাসপাতালে নেওয়া হলে জহুরুল হক (৩০) নামে এক পুলিশ কনস্টেবলকে মৃত ঘোষণা করা হয়। পরে আহত অন্যদের ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। ময়মনসিংহ মেডিকেল থেকে সাত পুলিশ সদস্যকে ময়মনসিংহ সিএমএইচে নেওয়া হলে সেখানে আসনারুল্লাহ নামে আরেক পুলিশ কনস্টেবলের মৃত্যু হয় বলে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নূরে আলাম জানান।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছে, সকাল নয়টার দিকে মুসল্লিরা যখন নামাজ আদায়ের জন্য শোলাকিয়া মাঠে যাচ্ছিলেন তখন আজিমউদ্দীন স্কুল সংলগ্ন মুফতি মোহাম্মদ আলী মসজিদের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা টহল পুলিশের একটি দলের ওপর বোমা হামলা চালানো হয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা এ সময় চাপাতি হাতে কয়েকজন যুবককে দৌড়াদৌড়ি করতে দেখে। তাঁরা চাপাতি দিয়ে পুলিশের ওপরও হামলা চালায়। হামলার ঘটনায় শোলাকিয়া ময়দানে থাকা মুসল্লিদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পরে নির্বিঘ্নে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
গত ১ জুলাই ঢাকার গুলশানে বাংলাদেশের ইতিহাসে নজিরবিহীন জঙ্গি হামলার ঘটনায় ২০ জন নিহতের পর এবার দেশের প্রধান সব ঈদ জামাতেই বাড়তি নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়। শোলাকিয়াতেও ওয়াচ টাওয়ার থেকে এবং ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরার সাহায্যে প্রতি মুহূর্তের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত পুলিশ শোলাকিয়া মাঠে যাওয়ার প্রধান রাস্তা স্টেশন রোড, গৌরাঙ্গবাজারের আশপাশের সব রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছে।
স্থানীয় গবেষকদের ভাষ্যমতে, ১৮২৮ সালে প্রথম অনুষ্ঠিত জামাতে সোয়া লাখ মুসুল্লি অংশগ্রহণ করেন বলে মাঠের নাম হয় ‘সোয়া লাখি মাঠ’। সেখান থেকে উচ্চারণের বিবর্তনে তা পরিণত হয়েছে আজকের নাম শোলাকিয়ায়। শোলাকিয়ায় প্রথম ঈদ জামাত হয় ১৮২৮ সালে। সেই হিসাব অনুযায়ী এবারে এ মাঠের ১৮৯তম ঈদ জামাত।
***পীরগঞ্জ টোয়েন্টিফোরে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।***