ভূত রাজার দরবারে সুনসান নিরাবতা। পিনপতন শব্দ তো দুরের কথা, সামান্য ধুলাবালি পড়ার শব্দও নেই।
গতকাল মুগ ডাল দিয়ে খাষি ভূনা খেয়ে ভূত উজির মশাইয়ের পেট ফেঁপেছে! তিনি পর্যন্ত বহু কষ্টে দুষ্টু হাওয়া চেপে দাড়িয়ে আছেন! একটু বেখেয়াল হলেই যখন তখন বিকট শব্দে একটা কেলেংকারি হয়ে যেতে পারে! কারণ ভূত রাজ দরবারে আজ জরুরি সভা বসেছে! জরুরি সভায় কোনরকম শব্দ হোক তা ভূত রাজা একদমই পছন্দ করেন না!
ভূত রাজার সামনে ভূত রাজ্যের সবচেয়ে মেধাবী ভূত ঙঙৎৎ দাঁড়িয়ে আছে। সে এবার গোটা ভূত সমাজের সর্বোচ্চ পরীক্ষায় রেকর্ড সংখ্যক মার্কস পেয়ে ভূতং স্কলারশিপ অর্জন করেছে। তো সেই স্কলারশিপ হিসাবে ভূত রাজ্যের আর্থিক সহায়তায় ঙঙৎৎ কে আরো উচ্চ জ্ঞান অর্জনের জন্য বাংলাদেশে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ঙঙৎৎ এর আপত্তি এখানেই। কারণ সে বই-পুস্তকে পড়েছে বাংলাদেশের অবস্থা খুবই খারাপ! সেখানে বিপদ আপদের নাকি কোন মা-বাপ নেই!
ঙঙৎৎ আমতা আমতা করে ভূত রাজাকে বললো, জাঁহাপানা বাংলাদেশ ছাড়া আমাকে অন্য কোন দেশে পাঠানো যায়না! মানে আমেরিকা, লন্ডন, সুইডেন, নরওয়ে- ওইসব দেশের কথা বলছিলাম আরকি!
ভূতরাজা ধমকে উঠলেন, খামোশ! চালাকি পেয়েছো? তোমাকে রাজকোষাগারের অর্থ খরচ করে আমেরিকা, লন্ডন পাঠাই আর তুমি জ্ঞান অর্জন সাইডে রেখে নাইট ক্লাবে গিয়ে পাগলা পানি খেয়ে ঢিঙ্কা চিকা..ঢিঙ্কা চিকা করে নাচো, তাইনা! আমাকে বেকুব ভেবেছো? তুমি বাংলাদেশে যাবে, এটাই ফাইনাল! আর তোমার সঙ্গে ভূত প্রধান সেনাপতি ড়ড়ঃঞ যাবে। তিনি তোমার নিরাপত্তার দিকটা দেখভাল করবেন। আর তেমন ভয়ের তো কিছু নেই! ভূত তান্ত্রিক তোমাদের অদৃশ্য হবার মন্ত্রটা শিখিয়ে দিবেন। বিপদ বুঝলেই ওই মন্ত্র জপে অদৃশ্য হয়ে আবার ভূত রাজ্যে চলে আসবে।
ভূত সেনাপতি প্রধানের প্রবল ইচ্ছে ছিল, এ সফর থেকে নিজেকে সরিয়ে নেওয়ার! কিন্তু ভূত রাজার ধমকের ভয়ে আর তা পারলেন না! ভূত রাজার ধমক খুবই মারাত্মক! এই তো গত সপ্তাহেই উজির ভূত রাজার ধমক খেয়ে ভয়তে রাজদরবারেই নিজের প্যান্ট ভিজিয়ে দিয়েছিলেন। আর সে হচ্ছে ভূত রাজ্যের প্রধান সেনাপতি। তারও যদি ধমক খেয়ে রাজ দরবারেই প্যান্ট ভিজে যায় তাহলে কি আর ইজ্জত থাকবে? ভূত সেনাপতি তাই মুখে কুলুপ এটে বসে থাকলেন।
এক রৌদ্রকরোজ্জল ঝলমলে সকালে ভূত সেনাপতি ড়ড়ঃঞ এবং মেধাবী ভূত ঙঙৎৎ হযরত শাহজালাল আর্ন্তজাতিক বিমান বন্দরে এসে নামলেন। বিমান বন্দরের নাম দেখে মেধাবী ভূত ঙঙৎৎ বেশ অবাক হয়ে গেল! সে তো বই-পুস্তুক পড়ে জানতো যে বাংলাদেশের বিমান বন্দরের নাম জিয়া আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর! তাহলে এখন এই নাম কেন! অবাক হয়ে ভূত সেনাপতি কে সে কথা জিজ্ঞেস করতেই সে বললো, নাম বদল করা হইছে! সেও অনেক আগের ঘটনা। তুমি তো দিন দুনিয়ার কোন খোঁজ-খবরই রাখোনা! সারাদিন কেবল পাঠ্য বই নিয়ে ঝিম মাইরা বইসা থাকো! পনেরশো কোটি টাকা খরচ করে বিমান বন্দরের নাম বদলানো হইছে, বুঝলা?
সেনাপতির কথা শুনে ঙঙৎৎ এর চোখ কপালে উঠে গেল। শুধু নাম বদলাতে এই দেশের মানুষ এত টাকা খরচ করে! বাপরে বাপ! সে ত্বরিৎ বিষয়টা তার নোট বুকে টুকে নিল। সেই সাথে মনে মনে ভূত রাজার প্রতি কৃতজ্ঞতাও প্রকাশ করলো! জাঁহাপানা তাকে একদম সঠিক জায়গায় পাঠিয়েছেন! এই দেশ থেকে আসলেই অনেক কিছু শেখার আছে!
হঠাৎ একটা হাউকাউ – কাউমাউ শুনে ঙঙৎৎ সেদিকে নজর দিলেন। দেখলেন সেখানে ভূত সেনাপতি প্রধান দাঁত মুখ খিচিয়ে এক বিরাট কাবজাব লাগিয়ে দিয়েছেন! কারণ তার লাগেজ খোয়া গেছে! লাগেজ নেই তো নেই! কোথাও পাওয়া যাচ্ছেনা! সেখানকার নিরাপত্তারক্ষীদের এ ব্যাপারে কোন ভ্রুক্ষেপ নেই। যেন এটা নিত্য নিয়ম মাফিক একটা ব্যাপার। আর এটা দেখে ভূতসেনাপতি প্রধানের সব রাগ গিয়ে পড়লো সেখানকার নিরাপত্তারক্ষীদের উপর। তিনি মনে মনে বললেন, সব অপদার্থের দল! আমার সেনাবাহিনীতে এগুলো থাকলে আজ চড়িয়ে সবগুলোর দাঁত ফেলে দিতাম! ফাজিলের বদ সব গুলো!
বিমানবন্দর থেকে বাইরে বের হতেই একদল ভিক্ষুক তাদের ঘিরে ধরলো। তারা সেনাপতি প্রধানের জামা টেনে ধরে বললো, পিলিজ স্যার, গিভ মি ওয়ান ডলার! জবাবে সেনাপতি প্রধান দাঁত মুখ খিচিয়ে বললেন, চড়িয়ে দাঁত ফেলে দিব নালায়েকের দল কোথাকার! যা ভাগ! দুরে যাইয়া মর! ঙঙৎৎ কিন্তু এসব দেখে একেবারেই মুগ্ধ। ভিক্ষুকের মুখে ইংরেজি ভাষা এবং বিমানবন্দরে ওদের অবাধ বিচরণ সে এই প্রথম দেখছে, যা আমেরিকা-লন্ডন গেলে কখনই দেখা যেতনা! আহা এই দেশে এসে জ্ঞান দেখি ক্রমেই বেড়েই চলেছে!
বাইরে বের হয়েই ভূত সেনাপতি মেধাবী ভূত ঙঙৎৎ কে বললেন, বুঝলে হে, বাংলাদেশে দ্রব্যমূল্যের উর্দ্ধগতি চলছে। ভূত রাজ্যের অর্থ কোষাগার থেকে আমাদের জন্য যা বরাদ্দ করা হয়েছে, তা দিয়ে এই দেশের দ্রব্যমূল্যের ব্যয় মোকাবেলা করে ফাইভ স্টার হোটেলে বেশি দিন থাকা যাবেনা। চলো আমরা একটা মাঝারি মানের হোটেলে উঠি। মেধাবী ভূত ঙঙৎৎ মাথা কাত করে ভূত সেনাপতির কথায় সায় জানালেন। কারণ এতে তারই লাভ হবে বেশি! অনেক দিন এদেশে থাকা যাবে। যার কারণে সে অনেক বিষয়ে জ্ঞান লাভ করতে পারবে। দুজনে একটা মাঝারি মানের হোটেল খুঁজে পেতে তাতে উঠে পড়লেন।
হোটেল রুমে ঢুকেই ভূত সেনাপতি ড়ড়ঃঞ মেধাবী ভূতকে বললেন, একটা ফ্রেশ লুঙ্গি থাকলে দাও তো! গোসল করে আসি। জানোই তো আমার লাগেজ তো খোয়া গেছে! এখন থেকে তোমার জিনিস গুলোই ব্যবহার করতে হবে। ঙঙৎৎ বললো, কোন অসুবিধা নেই সেনাপতি সাহেব। আপনার যখণ যেটা লাগবে নিয়ে নেবেন। শুধু আমার আন্ডারওয়্যারটা বাদে!
ভূত সেনাপতি ঙঙৎৎ এর দিকে তাকিয়ে চোখ পাকিয়ে বললেন, গুরু জনকে শ্রদ্ধা করতে শেখ! তোমার আন্ডারওয়্যার আমি নেব ক্যান? যুদ্ধ ক্ষেত্রে এক আন্ডারওয়্যার পড়ে আমি মাসের পর মাস কাটিয়েছি! শেষে অবস্থা এমন হয়েছিলো যে আমার সেই আন্ডারওয়্যারের গন্ধেই বিপক্ষ দলের সেনাপতি একদম কুপোকাৎ হয়ে যায়। কাজেই এখানেও প্রবলেম হবেনা। কারণ বাংরাদেশও একটা যুদ্ধক্ষেত্রই! দেখছোনা এখানে বাঁচার জন্য প্রতিমুহুর্তেই মানুষ যুদ্ধ করছে!
বাথরুমে গোসল করতে ঢুকেই সেনাপতি প্রধানের মেজাজ খারাপ হয়ে গেল। কলে পানি নেই। তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে বাথরুম থেকে বেড়িয়ে আসতে না আসতেই বিদ্যুৎও চলে গেল। দীর্ঘক্ষণ পরও বিদ্যুৎ পানি, কারোই আসার কোন খবর নাই দেখে ভূত সেনাপতি প্রধান আর মেধাবী ভূত ঙঙৎৎ বাইরে বেরিয়ে এলেন।
ভূত সেনাপতি প্রধান ড়ড়ঃঞ আর মেধাবী ভূত ঙঙৎৎ ঢাকা শহরের গুলিস্তান এলাকায় ঘুরতে চলে এলেন। ঙঙৎৎ এখানে এসে অনেক খুশি। কারণ এখানে এত মানুষের ভিড়ে তার জ্ঞান প্রতি মুহুর্তেই বাড়ছে। হঠাৎ ভূত সেনাপতি চানাবুট কিনতে গিয়ে দেখলেন তার পকেটে মানিব্যাগ নেই। মানিব্যাগটা কোন ফাঁকে যেন লোপাট হয়ে গেছে! একথা শুনে মেধাবী ভূত তার পকেটে হাত দিয়ে দেখলেন, তারও মানিব্যাগ লোপাট! ভূত সেনাপতি এই ঘটনা সেখানে কর্তব্যরত আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর এক সদস্যকে জানাতেই সে দাঁত কেলিয়ে বললো, হিঃ হিঃ পকেটমারে আপনাগো সাফা কিরকিরা কইরা দিছে! আপনাগো আগেই বোঝা উচিত ছিল যে এইটা গুলিস্তান এলাকা! এইখানে সবতেই পকেটমারা খাইতেছে!
তার কথা শুনে ভূত সেনাপতির মেজাজ আরো খারাপ হয়ে গেল! ভূত সেনাপতি মনে মনে বললো, তাইলে তুই কি এখানে ফিল্ডিং মারতে খাড়ায়া রইছস বান্দর? তিন কোনাইচ্যা শয়তান কুনহেনকার! আমার সেনাবাহিনীতে তুই থাকলে আজ তোর মুখের একটা দাঁতও থাকতোনা!
পকেটে ভাড়া না থাকায় ভূত সেনাপতি আর মেধাবী ভূত হেটে হেঁটে হোটেলে ফিরতে গিয়ে লোডশেডিং এর অন্ধকারে বাংলার গর্ব (!) ঢাকনা খোলা ম্যানহোলে পড়ে গেলেন! ঢাকনা খোলা ম্যানহোলে পড়ে সেনাপতি প্রধানের মেজাজ গেল আরো বিগড়ে! তিনি চেঁচিয়ে বললেন, নগরের মধ্যে যদি এভাবে ঢাকনা খোলা ম্যানহোল থাকে তাহলে আর নগরপালের থাকার দরকার কি?
ম্যানহোলের ইয়ে(!) সমৃদ্ধ পানিতে হাবুডুবু খেতে খেতে ভূত সেনাপতি ড়ড়ঃঞ আর মেধাবী ভূত ঙঙৎৎ কোনরকমে উপরে উঠে আসেন! আর ঠিক তখনই দুজন পুলিশ সদস্য এসে তাদের গ্রেফতার করে!
প্রথম পুলিশ সদস্য বললো, স্যার এই দুইটারে বল্টু হত্যা মামলার আসামি কইরা দেই! কি বলেন? আসল আসামি তো ভাগছে! এখন তারে কষ্ট কইরা কে খুঁজবো কন?
দ্বিতীয় পুলিশ বললো, আবার জিগায়! থানায় লইয়া চল! রিমান্ডে ডলা দিয়ে সব স্বীকার করায়া নিমুনে!
এই কথার সাথে সাথে ভূত সেনাপতি মেধাবী ভূতের কানে কানে বললো, ঙঙৎৎ চলো অদৃশ্য হওয়ার মন্ত্রটা পড়ে আমরা অদৃশ্য হয়ে আমাদের দেশে চলে যাই! মনে হচ্ছে আমরা ঘোর বিপদে পড়েছি! ঙঙৎৎ ভূত সেনাপতির কথায় বাধা দিয়ে বললো, আরে সেনাপতি সাহেব আপনি সেনাপতি ভূত! আপনার এত ভয় পেলে কি চলে? তারচেয়ে চলেন না দেখে আসি মানুষের থানায় কি কি হয়! নতুন একটা জ্ঞান বাড়বে!
ভূত সেনাপতি ড়ড়ঃঞ আর মেধাবী ভূতের রিমান্ড একটু আগেই শেষ হয়েছে! রিমান্ডে ডলার ঠেলায় তারা দুজনেই স্বীকার করেছেন যে, বল্টুকে তারাই হত্যা করেছে!
আরও পড়তে পারেন: বাঙালির রেড জোন – রোহিত হাসান কিছলু
থানা অফিসার এখন ফোনে কথা বলছেন, জ্বী স্যার দুজনরেই স্বীকার করায়া ফালাইছি! এরেই কয় ডলার নাম বাবাজি! না না স্যার আপনি চিন্তা করবেন না! আসল খুনি কোনদিনই ধরা পড়বো না! আপনার নিমক খাই! কি করে নিমক হারামী করি কন?
ভূত সেনাপতি মেধাবী ভূতকে বললেন, এসব কি হইতেছে? অদৃশ্য হওয়ার মন্ত্রটা কি তোমার মনে আছে? আমি তো মাইর খাইয়া নিজের বাপের নাম ভোলার সাথে সাথে ওই মন্ত্রটাও ভুইলা গেছি!
মেধাবী ভূত বললো, সেনাপতি সাহেব, অদৃশ্য হবার মন্ত্রটা আমিও ভুলে গেছি! যেই মারটাই না মারলো! এমন মাইর খেলে কিছু মনে থাকে নাকি? এমন কি আমি চোখেও ঝাপসা দেখতেছি! একটা নতুন জ্ঞান হলো! কি বলেন?
সেনাপতি সাহেব দাঁত মুখ খিচিয়ে বললেন, এই তোমার জন্যেই আজ এমন হল! ভূত রাজ্যে থাকলে আমি এখনই চড়িয়ে তোমার সব কটা দাঁত ফেলে দিতাম! নেহাত বেড়াতে এসেছি বলে তোমাকে কিছু করছি না!
মেধাবী ভূত বললেন, আরে রাগ করেন ক্যান! বলি সামনে আমাদের কি হবে সেটা জানলে বলুন! আমার খুবই মজা লাগছে!
ভূত সেনাপতি উদাস ভাবে বললেন, কি আর হবে! খুনের মামলায় জেলে যেতে হবে! ওখানে তুমি আরো জ্ঞান অর্জন করতে পারবা! আর খুনের মামলা তো! কপাল ভালো থাকলে দেখবা একদিন আমাদের ফাঁসিও হবে! তখন ভূত থেকে মইরা গিয়া মানুষ হইয়া যাইবা! সবই তকদীরের খেইল! বুঝলা?
প্রচ্ছদ: তানভীর আহমেদ
***পীরগঞ্জ টোয়েন্টিফোরে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।***