মুখ খুললেন অং সাং সু চি, জানালেন নিজের অবস্থান। কিন্তু মিয়ানমারে রোহিঙ্গা-নিকেশ ও নির্যাতন নিয়ে অভিযোগের উত্তর মিলল না। আমেরিকাও জানিয়ে দিল রোহিঙ্গা-সঙ্কট মোচনে এখনই মিয়ানমারের উপরে তাঁরা কোনও আর্থিক নিষেধাজ্ঞা জারি করবে না।
চলছে বিশ্ব জুড়ে নিন্দা। উঠেছে নোবেল শান্তি পুরস্কার কেড়ে নেওয়ার দাবি। সু চি-র শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সরিয়ে ফেলেছে তাঁর ছবি। সোশ্যাল নেটওয়ার্ক, সংবাদমাধ্যম থেকে বিশ্বমঞ্চে কম তুলোধুনা করা হচ্ছে না তাঁকে। প্রশ্ন তোলা হচ্ছে, মিয়ানমারের জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে তো এক সময়ে প্রবল সরব ছিলেন গণতন্ত্রকামী এই নেত্রী। দেশে রোহিঙ্গা-নিকেশের অভিযোগ নিয়ে এখন কেন নীরব?
আজ জবাব দিলেন সু চি। মার্কিন বিদেশ সচিব রেক্স টিলারসনকে পাশে রেখে বললেন, “এত দিন মোটেই চুপ করে ছিলাম না। তবে যা বলেছি, সেটা হয়তো সকলের কাছে চিত্তাকর্ষক মনে হয়নি। আমি আসলে এমন কিছুই বলতে চাই না, যাতে উত্তেজনা বাড়ে।” ব্যস এইটুকুই! কিন্তু উত্তেজনা কমানোর জন্য তিনি কী করছেন, সেটাই রয়ে গিয়েছে ধোঁয়াশায়।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের অনেকে মনে করছেন, দেশের অসামরিক সরকারের উপদেষ্টা তথা শীর্ষনেত্রী হলেও দেশের ক্ষমতাবান সেনাবাহিনীর সঙ্গে সংঘাতে যাওয়ার মতো অবস্থাতেই নেই সু চি। পাঁচ দশকের সামরিক শাসনের অবসান ঘটিয়ে দেশে সবে ২০১৫ সালে একটি অসামরিক সরকার হয়তো গড়া গিয়েছে। কিন্তু এখনও সেনার সঙ্গে ক্ষমতা ভাগ করেই চলতে হয় সেই সরকারকে।
আরও পড়তে পারেন: জোর করে ওরাল সেক্স ধর্ষণ কি? জানাবেন আদালত
দেশের নিরাপত্তার প্রশ্নে বেশি কিছু বলার সুযোগ নেই অসামরিক সরকারের। ফলে সেনার বিরুদ্ধে কঠোর কোনও অবস্থান নিতে গেলে হিতে বিপরীত হতে পারে। ফের সামরিক শাসনের গর্ভে চলে যেতে পারে মিয়ানমার। সম্ভবত সে কারণেই সতর্ক সু চি রোহিঙ্গা প্রশ্নে নীরব।
এই জল্পনায় ইন্ধন জুগিয়েছে টিলারসনের সফর। সু চি শুধু নয়, মার্কিন বিদেশ সচিব আজ বৈঠক করেন মিয়ানমারের সেনাপ্রধানের সঙ্গেও। বৈঠকের পরে টিলারসন জানিয়ে দিয়েছেন, প্রায় ৬ লক্ষ রোহিঙ্গাকে দেশ ছাড়া করার জন্য এখনই মিয়ানমারের উপরে আর্থিক নিষেধাজ্ঞা চাপানোর সুপারিশ করতে চান না। তিনি বরং রোহিঙ্গা-নির্যাতন নিয়ে নির্ভরযোগ্য তদন্তের পক্ষপাতি।
টিলারসনের কথায়, “আমরা চাই মিয়ানমার সফল হোক। আর্থিক নিষেধাজ্ঞা চাপালেই সমস্যা মিটে যাবে, এমনটা ভাবার কারণ নেই।” মিয়ানমার সেনা এবং সু চি-র সরকার, উভয়েরই দাবি, শুধু বিদ্রোহী রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধেই পদক্ষেপ করা হচ্ছে। যদিও বাংলাদেশে পালানো রোহিঙ্গাদের মুখে খুন-ধর্ষণ-নির্যাতনের ভয়াবহ প্রকাশিত হচ্ছে। টিলারসন এই প্রসঙ্গে বলেছেন, “যে সব তথ্য ওখান থেকে উঠে আসছে তা ভয়াবহ। তাই স্বাধীন তদন্তের প্রস্তাব মেনে নেওয়া উচিত মিয়ানমারের।”
ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন প্রথম থেকেই রোহিঙ্গা প্রশ্নে সু চি সরকারের দিকে আঙুল তোলার বিষয়ে সতর্ক। তারা বরং সেনাকেই বেশি দায়ী করে আসছে। মিয়ানমার সেনাকে আর্থিক সহায়তা দেওয়ার উপরে নিষেধেজ্ঞা জারির দাবি উঠেছে আমেরিকাতেও।
***পীরগঞ্জ টোয়েন্টিফোরে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।***