শাহ্ আব্দুর রউফ কলেজে অনুষ্ঠিত হল জঙ্গি ও সন্ত্রাস বিরোধী আলোচনা সভা

তারিখ:

গত ০৩ সেপ্টেম্বর শনিবার শাহ্ আব্দুর রউফ কলেজে অনুষ্ঠিত হল জঙ্গি ও সন্ত্রাস বিরোধী আলোচনা সভা। সারা বাংলাদেশে জঙ্গি ও সন্ত্রাস রোধে বাংলাদেশ সরকার এবং শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের উদ্যোগে প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এই কর্মসূচি চলছে। গত ১ জুলাই গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে সন্ত্রাসী হামলাকে কেন্দ্র করে সারা দেশে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়। এই সন্ত্রাসী হামলায় জড়িত ছিল বে-সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু ছাত্র। তারপর থেকেই যেন জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো কি জঙ্গি ও সন্ত্রাস তৈরির কারখানায় পরিণত হচ্ছে। এরই আলোকে দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বাধ্যতামূলক জঙ্গি ও সন্ত্রাস বিরোধী আলোচনা সভা করার নির্দেশ দেওয়া হয়। আরো নির্দেশনা দেওয়া হয় যদি কোন শিক্ষার্থী ১০ দিনের বেশি অনুপস্থিত থাকে তাহলে অবশ্যই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জানাতে হবে। আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন অত্র কলেজের অধ্যক্ষ রাশেদুন্নবী, উপাধ্যক্ষ শহিদুল ইসলাম পাশা, কলেজের পরিচালনা কমিটির সভাপতি এ.কে.এম ছায়াদত হোসেন বকুল, এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক, প্রভাষক অভিভাবক ও ছাত্র-ছাত্রীবৃন্দ।

অধ্যক্ষ রাশেদুন্নবী তার বক্তব্যে বলেন, জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস বর্তমানে একটা বড় সমস্যা। এটা প্রতিরোধ করতে হলে আমাদের সকলকে এক সঙ্গে এগিয়ে আসতে হবে। আর সন্ত্রাস প্রতিরোধ করতে হলে প্রথমে পরিবার তারপর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নীতি শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে। পরিবারের দায়িত্ব থাকবে আপনার সন্তান কোথায় যাচ্ছে কার সাথে মিশছে। আর আমরা তাদের সঠিক শিক্ষা দিবো। তাহলে তরুণ প্রজন্ম অবশ্যই আলোর পথে জাতিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবে। আর এই সম্মিলিত চেষ্টাই পারবে জঙ্গি ও সন্ত্রাস থেকে জাতিকে রক্ষা করতে।

অধ্যাপক শামছুজ্জামান আঞ্জু বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও প্রশাসন মিলে আমাদের দায়িত্ব দিয়েছে জঙ্গি ও সন্ত্রাস বিরোধী আলোচনা সভা করার জন্য। তারা এসে দেখুক আমরা আলোচনা সভা করছি কিন্তু তাদেরও দায়িত্ব আছে এসবের খোঁজ নেওয়ার। কিছু সংগঠন আছে যারা ধর্মকে পুঁজি করে আগামী দিনের পথপ্রদর্শকদের ভূল পথে চালিত করছে। আমার কথা হল যারা নিজেরাই ধর্ম ভাল করে জানেনা তার কি ধরণের ধর্মীয় শিক্ষা দেবে…! তারাই ধর্মের নামে জঙ্গি ও সন্ত্রাস সৃষ্টি করছে। তিনি অভিভাবকদের উদ্দেশ্য করে বলেন, আপনারা সব সময় খোঁজ খবর রাখবেন আপনার সন্তান কোথায় যায় কার সাথে মেশে কি উদ্দেশ্যে মেশে। আর আমরা দেখব তার আচরণ কিরূপ এবং আমাদের কাছ থেকে কি নীতি শিক্ষা অর্জন করছে। কেননা জঙ্গি ও সন্ত্রাস তো আর এমনি তৈরি হয়না। পরিবার এবং আমাদের কাছ থেকে উপযুক্ত শিক্ষা না পাওয়ার ফলেই তারা জঙ্গি ও সন্ত্রাস হয়ে যাচ্ছে আর সমাজে আতঙ্ক সৃষ্টি করছে। আমাদের সংকল্প করতে হবে যেন দেশকে ভবিষ্যতের কর্ণধারদের রক্ষা করতে।

সাংবাদিক সোনা মিয়া বলেন, সমাজে ভালো মানুষের চাইতে খারাপ মানুষের সংখ্যা কম কিন্তু খারাপটা নিয়ে বেশি আলোচনা হওয়ায় খারাপের সংখ্যা বেশিই মনে হয়। বাংলাদেশের কথা বললে বলব এদেশে সন্ত্রাসী স্থায়ী হবে না। কারণ বাংলাদেশের মানুষ শান্তি প্রিয়। আমরা আর কারো বা কোন বাহিনীর হাতে কুকুর শেয়ালের মত মরব না, আমাদের সময় এসেছে শপথ নেবার আমরা জঙ্গি ও সন্ত্রাস চাইনা, আমাদের সোনার ছেলেদের জঙ্গি ও সন্ত্রাস হিসেবে নয় একজন যোগ্য নাগরিক এবং ভবিষ্যতের কান্ডারী হিসেবে দেখতে চাই।

নুরুল ইসলাম রাজা বলেন, জঙ্গি ও সন্ত্রাস বর্তমানে জাতীয় সমস্যায় পরিণত হয়েছে। এটা শুধু আজকের ইতিহাস নয়, সেই মুক্তিযুদ্ধ থেকেই তারা আমাদের পিছনে লেগে আছে। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুর পরিবারকে হত্যার মধ্য দিয়ে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদের শুরু। ১৯৭১ সালের পর ধর্ম নিরপেক্ষ রাষ্ট্র গঠন করা হয় যেখানে সকল ধর্ম নিয়ে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হল। এরপর তারা ধর্মীয় রাজনৈতিক দল গঠন করল, শাহাদতে-আল-হিকমা তা নিষিদ্ধ করা হল আবার গঠন করল হুজি, জেএমবি নাম পালটিয়ে জেএমএমবি। অতপর গঠন হল আনসারুল্লা বাংলা টিম যার নেতা শায়খ আব্দুর রহমান। আজকে যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসি হলে বহির্বিশ্বে কিছু এবং জঙ্গি সংগঠনগুলো তরুণদের ভূল বুঝিয়ে তাদের বলছে মিছিল কর, বোমা ফাটাও, এটা কাদের শিক্ষা…! এগুলো সবই ছিল জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদী সংগঠন। যাদের অপপ্রচারে অনেক মা-বাবা তাদের সন্তানদের হারিয়েছে শুধু জঙ্গি ও সন্ত্রাস হয়েছে বলে। তারা কি আসলেই জঙ্গি হয়ে জন্ম নিয়েছিল, না! বর্তমানে কিছু বে-সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে জঙ্গিদের ইন্ধন দিচ্ছে যার ফলে তারা ভূল পথে যাচ্ছে। কিছু জঙ্গি ইসলামের নামে তাদের বোঝাচ্ছে জিহাদ কর আরে তারা তো জানেই না ইসলাম ধর্ম কি? কুরআনের কোথাও লেখা নাই কারো সাথে জবরদস্তি কর। শুধুমাত্র তাদের অর্থের লোভ দেখিয়ে মানুষ হত্যাও করাচ্ছে আর তরুণ প্রজন্মের ক্ষতি সাধন করে যাচ্ছে। তাই আমাদের সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে যেন আর কোন তরুণ জঙ্গি ও সন্ত্রাসের পথে পা না বাড়ায়।

এছাড়া বক্তব্য রাখেন উপাধ্যক্ষ শহিদুল ইসলাম পাশা, কলেজের পরিচালনা কমিটির সভাপতি এ.কে.এম ছায়াদত হোসেন বকুল ও ইংরেজি বিভাগের শিক্ষিকা রওশন আরা।

***পীরগঞ্জ টোয়েন্টিফোরে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।***

শেয়ার করুন:

Subscribe

জনপ্রিয়

এমন আরও
সম্পর্কিত

পীরগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি

পীরগঞ্জ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী শাহজাদা মো. আসাদুজ্জামান...

প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে কটূক্তির প্রতিবাদে বিক্ষোভ

বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের...

১স্টার স্বীকৃতি পেল পীরগঞ্জ ফুটবল একাডেমি

ফিফা এএফসি ও বাফুফে কর্তৃক নিবন্ধিত একাডেমিতে ১স্টার স্বীকৃতি...

ড.এম এ ওয়াজেদ মিয়ার ১৩তম মৃত্যুবার্ষিকীতে পীরগঞ্জ ছাত্রলীগের শ্রদ্ধাঞ্জলি

খ্যাতনামা পরমাণু বিজ্ঞানী, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-এর...