রংপুরের পীরগঞ্জে অনুমোদন বিহীন ৪২টি ইট ভাটা, বৈধ ভাটার সংখ্যা মাত্র ২টি। অবৈধ ইট ভাটাগুলোতে ব্যবহৃত হচ্ছে রেজিস্ট্রেশন বিহীন অসংখ্য দুর্বার ট্রাক। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে গ্রামীণ কাঁচা-পাকা রাস্তা, চাকায় পিষ্ট হয়ে মরছে পথচারী, সরকার হারাচ্ছে লাখ লাখ টাকা রাজস্ব, ধ্বংস হচ্ছে পরিবেশ।
সরে জমিনে ঘুরে দেখা গেছে, উপজেলার নতুন পুরাতন মিলে ৪২টি ইট ভাটা রয়েছে। বৈধ রেজিস্ট্রেশন রয়েছে মাত্র ২টির। বাকি ৪২টি ভাটারই রেজিস্ট্রেশন সহ বৈধ কাগজপত্র নেই। স্থানীয় কৃষি বিভাগ অধিদপ্তরের অনুমতি ছাড়াই কৃষি জমিতে গড়ে উঠেছে ইটভাটাগুলো। আর এ জন্যও রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে সরকার ও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে হাজার হাজার একর কৃষি জমি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভাটার কর্মরত কর্মচারীরা জানান পরিবেশ অধিদপ্তর ও আয়কর বিভাগের কর্মকর্তাগণ নিয়মিত মাসোহারা পেয়ে থাকেন ভাটাগুলো থেকে। ভাটাগুলোতে মাটি ও ইট বহনকারী বৈধ কাগজবিহীন ট্রাক ব্যবহৃত হয়। ড্রাইভিং সনদবিহীন, অপ্রশিক্ষিত ও অদক্ষ চালক দ্বারা চালিত হওয়ায় ট্রাক পরিচালনা আইনের বিন্দু বিসর্গ পর্যন্ত জ্ঞান নেই এদের। যে কারণে ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হয়ে প্রাণ দিতে হচ্ছে নিরীহ পথচারীদের। গত এক মাসে একজন শিশু সহ দুই জন নিহত হয় এবং মারাত্মক আহত হয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করেছে অনেকে। এ সব ঘটনায় আইনী পদক্ষেপ না নেয়ায় বেপরোয়া হয়ে উঠেছে ভাটা কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্ট যানবাহন চালকরা।
পরিবেশ সংরক্ষণ আইন-১৯৯৫, পরিবেশ বিধিমালা-১৯৯৭, ইট পোড়ানো (নিয়ন্ত্রণ) আইন-২০০১ এবং শব্দ দূষণ বিধিমালা-২০০৬ অগ্রাহ্য করে নতুন একাধিক ইট ভাটা নির্মাণের কাজ চলছে মহাসমারোহে। অনাবাদি ২ একর জমি ব্যবহারের নিয়ম থাকলেও প্রতিটি ইট ভাটা নির্মাণে ১০ একরের অধিক দো-ফসলী আবাদি কৃষি জমি ব্যবহার করা হচ্ছে।
বিধিমালা অনুযায়ী ভাটার ১ কি:মি: এর মধ্যে আবাসিক বাড়ি, হাসপাতাল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, এলজিইডি’র পাকা রাস্তা থাকা চলবে না। ভবিষ্যতে কৃষি বিভাগ কর্তৃক ইট ভাটার জন্য নির্ধারিত স্থানটি কৃষি জমি হিসেবে দাবী করলে এবং এ অফিস কর্তৃক ইট ভাটা বন্ধ করার নির্দেশ প্রদান করা হলে উদ্যোক্তা ইট ভাটা বন্ধ করতে বাধ্য থাকবে এবং কোন প্রকার ক্ষতিপূরণ দাবী করতে পারবে না।
বাস্তবতা বলছে ভিন্ন কথা স্থানীয় কৃষি অফিস দাবী তো দূরের কথা তাদের চোখের সামনে একের পর এক গড়ে ওঠা প্রতিটি ভাটা নির্মাণে ১০ একরের বেশী কৃষি জমি ব্যবহার করছে ভাটা মালিকরা। ইট ভাটার জন্য যে স্থান হতে মাটি কাটা হবে ওই স্থানে পাড় বিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ পুকুরে পরিণত করতে হবে যাতে সেখানে মৎস্য চাষ করা যায়। যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন সাপেক্ষে মজা পুকুর, খাল, দিঘী, নদ-নদী, হাওড়-বাওড়, চরাঞ্চল বা তৎসমতুল্য জায়গা থেকে ইট তৈরীর মাটি সংগ্রহ করার কথা থাকলেও তা যেন শুধু কাগজে কলমে সীমাবদ্ধ।
এ ভাটাগুলো এ সব নিয়মের প্রতি বুড়ো আঙ্গুল দেখালেও কর্তৃপক্ষ অজানা কারণে নিশ্চুপ। এছাড়াও গুরুত্বপূর্ণ পাকা সড়ক থাকা স্বত্বেও চৈত্রকোল ইউনিয়নে ছিলিমপুরে দুটি ইট ভাটা এবং অনেক ইট ভাটা মালিক গ্রামীণ কাঁচা রাস্তা ব্যবহারে সরকারের সুনির্দিষ্ট নীতিমালা থাকলেও তা মানছে না। কাঁচা রাস্তায় ভাটার কাজে নিয়োজিত যানবাহন গুলোর যাতায়াতের ফলে সাধারণ পথচারীসহ নানা বিড়ম্বনার স্বীকার হচ্ছেন অনেকে।
স্কুল শিক্ষার্থীদের পড়তে হয় নানা বিড়ম্বনায়। সকালে স্কুল ব্যাগ নিয়ে পরিষ্কার কাপড় চোপড় পরে বেরিয়ে যাওয়া শিক্ষার্থীর বিকেলে যখন বাড়ি ফেরে তখন দেখা যায় পা থেকে মাথা পর্যন্ত শরীরের আদ্যপ্রান্ত ধুলায় জড়ানো। এতে এ সব শিশুরা আক্রান্ত হয়ে পড়ছে শ্বাসকষ্ট সহ নানা রোগে। কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত গ্রামীণ কাঁচা পাকা এই রাস্তাগুলো চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কমল কুমার ঘোষ জানান, কৃষি বিভাগের অধীনে জনগণকে সচেতন করার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। তবে ওই ভাটাগুলোতে মোবাইল কোট পরিচালনা অব্যাহত রয়েছে।
আরও পড়তে পারেন: পীরগঞ্জে মানিক হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের গ্রেফতারের দাবিতে বিক্ষোভ
***পীরগঞ্জ টোয়েন্টিফোরে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।***