“আমরা যেন মূর্তি পূজা ছেড়ে দেই”

তারিখ:

লালমনিরহাট জেলার আদিতমারী উপজেলার সারপুকুর ইউনিয়নের দাসপাড়া (মাঝিপাড়া) গ্রামে শনিবার রাতে অতর্কিত হামলা চালিয়ে মন্দির, মন্দিরের লক্ষী-নারায়ন মুর্তিসহ বেশ কয়েকটি হিন্দু বাড়ি ভাঙচুর করেছে চিহ্নিত দুর্বৃত্তরা। স্থানীয় উগ্রপন্থী হিসেবে পরিচিত সাবেক ইউপি সদস্য নবু ইসলাম হামলাকারীদের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন এবং আমাদের শাসিয়েছেন আমরা যেন মূর্তি পূজা ছেড়ে দেই, ওই গ্রামবাসীদের অভিযোগ।

গ্রামবাসী জানায়, লক্ষী-নারায়ন মুর্তি রাস্তা দিয়ে নিয়ে আসার সময়। স্থানীয় কদমতলা হাফিজিয়া মাদ্রাসার কয়েকজন ছাত্র হিন্দুদের দেব-দেবী নিয়ে অকথ্য ও নোংরা ভাষায় গালাগাল করে।

এসময় হিন্দুদের কয়েকজন এর প্রতিবাদ জানায়। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ওই মাদ্রাসার ছাত্ররা স্থানীয কিছু উগ্রপন্থী লোকজনের সঙ্গে সমবেত হয়ে লাঠি সোডা নিয়ে ওই গ্রামে অতর্কিত হামলা চালায় বলে তারা জানান।

হামলার শিকার জিতিন্দ্র নাথ দাস, সেমা চরণ দাস, অতুল চন্দ্র দাস, পরেশ চন্দ্র দাস, ভানু চন্দ্র দাস, বালি চন্দ্র দাস ও কার্তিক চন্দ্র দাস জানান, প্রায় ২০০/২৫০ মাদ্রাসা ছাত্র ও তাদের সমর্থিত উগ্রপন্থী লোকজন তাদের উপর হামলা চালায়।

এসময় তারা মন্দির, মন্দিরের মূর্তি ও তাদের বাড়ি ঘরে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে। হামলা থেকে রক্ষা পেতে স্থানীয় ১০০টি পরিবারের হিন্দুরা সবাই বাড়ি ঘর ছেড়ে নিরাপদে আশ্রয় নেয় বলে তারা জানান।

জিতিন চন্দ্র দাস অভিযোগ করে বলেন, মাদ্রাসার ছাত্ররা তাদের স্পষ্ট জানিয়েছে, এলাকায় বাস করতে হলে মূর্তি পূজা ছেড়ে দিতে হবে। কারণ মাটির মূর্তি কখনোই কথা বলে না আর এসব মূর্তি দেখলে মুসলমানদের পাপ হয়। আমরা যদি গ্রামে মূর্তি পূজা করি তাহলে আমাদের গ্রাম থেকে উচ্ছেদের হুমকিও দিয়েছিল হামলাকারীরা।

সামান্য কিছু মুসলমান ছাড়া সকলেই একত্রিত হয়েছে এবং তারা পুনরায় হামলা করতে পারে। আমরা খুবই সাধারণ হিন্দু জনগোষ্ঠী, আমরা গরীব মাছ শিকার করে বেঁচে থাকি। কিন্তু আামাদের পক্ষে বেঁচে থাকা দুরুহ। আমরা এখন নিরাপত্তাহীনতায় দিনযাপন করছি। জানি না আমাদের ভাগ্যের পরিণতি কি হয়, এমনটি কেঁদে কেঁদে জানালেন কার্তিক চন্দ্র দাসের স্ত্রী পার্বতী রানী দাস।

গত ইউপি নির্বাচনে আমরা হিন্দুরা হামলাকারীদের নেতৃত্ব দানকারী সাবেক ইউপি সদস্য নবু ইসলামকে ভোট দেইনি। আর এজন্যই তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে ওই সকল মাদ্রাসা ছাত্রদের নেতৃত্ব দিয়ে এ হামলা চালিয়েছেন। সুকৌশলে আমাদের উপর প্রতিশোধ নিলেন উনি, এমনটি অভিযোগ করলে স্থানীয় পরেশ চন্দ্র দাস।

তবে অভিযুক্ত সাবেক ইউপি সদস্য নবু ইসলাম তার উপর সকল অভিযোগ মিথ্যা ভিত্তিহীন দাবি করে বলেন, সৃষ্ট ঘটনার জন্য মাদ্রাসা ছাত্র ও হিন্দুরা দায়ী। তিনি শুধু চেষ্টা করেছিলেন সৃষ্ট ঝামেলা থামাতে।

সারপুকুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মনসুর আলী ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন বিষয়টি মীমাংসার জন্য স্থানীয়ভাবে চেষ্টা চলছে।

***পীরগঞ্জ টোয়েন্টিফোরে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।***

শেয়ার করুন:

Subscribe

জনপ্রিয়

এমন আরও
সম্পর্কিত

সওজ প্রকৌশলী ও তার স্ত্রীর অবৈধ সম্পদ ১২ কোটি টাকার

প্রায় সাড়ে ১২ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন ও...

ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে বেরোবি শিক্ষার্থী তুষারের আত্মহত্যা

রংপুরের সাহেবগঞ্জের তিনমাথার মোড় এলাকার বাসিন্দা এবং বেরোবির শিক্ষার্থী...

বিজ্ঞাপনসহ বিদেশি চ্যানেলগুলোর সম্প্রচার বন্ধ

দেশে সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী বিজ্ঞাপনসহ বিদেশি চ্যানেলগুলোর অনুষ্ঠান প্রচার...

রংপুরে মাদকসেবীর ছুরিকাঘাতে এএসআই নিহত

রংপুরে মাদকসেবীর ছুরিকাঘাতে পুলিশের সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) পিয়ারুল ইসলাম...