ঠকঠক , ঠকঠক, পি পি পি পি …. দুইটা আওয়াজ কানে বাজতেছে, এতো রাতে এগুলো কিসের শব্দ ? আমি তো কেবল ঘুমালাম। আর এতো রাতে বাইরে এতো কথা কিসের…. দেখিতো উঠে একবার, চোখ খুললাম! রুম অন্ধকার ঘড়ির দিকে তাকালাম, সন্ধ্যা 7.50 P.M! তারমানে এখন কেবল সন্ধ্যা লাগলো। ঘোরের ভিতর আছি কিন্তু শব্দ হচ্ছেই আর হচ্ছে। নাহ শব্দ গুলো থামানো দরকার, এবার ঠকঠক শব্দটা দুম দুম আওয়াজে রুপ নিলো বুঝতে পারলাম এই শব্দ আমার দরজায় হচ্ছে, দরজা খোলার সাথেই হুরমুর করে ঢুকে পড়লো কর্ন।
-আরে ব্যাটা কুম্ভকর্ণের মতো ঘুমাস ক্যান? কানের কাছে একটা বোম ফাটলেও তো টের পাবিনা।
আর আমি তখন থেকে বাইরে দাড়ায়া তোর ঘড়ির আলার্ম এর সাউন্ড শুনতাছি অফ কর ঐটা।
– হুহ
-আরে চোখ খুল। গাঞ্জা খাইচোস?
একজন মানুষ ঘুম থেকে উঠলো মাত্র, আর তাতেই তুই এমন প্যাঁচাল শুরু করে দিলি ক্যান? আর শুদ্ধ করে কথা বল। গাঞ্জা হবেনা হবে গাজা। আর আমি গাজা ক্যান খাবো? দুপুরে খাবার খেয়ে একটা ঘুম দিছি।
-রাখ তোর ঘুম আর তোর ঘড়ির বাজনা অফ কইরা চল বাইরে যামু।
-ঘড়িটা কোথায়? এনে দে আমি অফ করি।
-তোর ঘড়ি কই আমি ক্যামনে কই? দেখ তোর ড্রয়ার থিকা বাজনা আসতেছে।
-ওহ ।
ড্রয়ার থেকে ঘড়িটা বের করে আলার্ম অফ করে চেয়ে আছি, ঘড়িটা বৌদির গিফটেড ওয়াচ, অনেক সুন্দর। ঘড়িটা সবসময় ব্যবহার করা হয়ে উঠেনা। যত্ন করে রেখে দিই ড্রয়ারে আর এ্যালার্ম বাজলে ড্রয়ার খুলে এ্যালার্ম অফ করি।
বললাম, কই যাবি?
-চল বাহাদুর মামার দোকান থিকা এক কাপ চা খাইয়া আসি।
-এই জন্য আমার কাচা ঘুম ভাঙ্গালি?
-আরে ব্যাটা এইটা মেইন ফ্যাক্ট না। অন্য কাজ আছে, ছাদে দেখলাম তিথি আসছে ওকে দেখার জন্য তোকে ডাকতে আসছি। হাজার হইলেও ভাবি বইল্লা কথা।
-তোকে আমি কখনো বলছি ও তোর ভাবী? এখনো বিয়াই করিনাই আর ভাবী বানাই দিলি একটা মেয়েকে। যা তুই দেখ আমি আরেকটু ঘুমাবো।
-আরে বেটা তুই তো অরে লাইক করস তাই না?
-হু আগে করতাম কিন্তু এখন না।
(রিয়েলি অনেক দিন হলো ওকে দেখা হয়না…. সেই কতোদিন আগে একবার দেখা হইছিলো। চারপাশে বৃষ্টি হচ্ছিলো আর ওকে ফোন করে ঘুম ভাঙ্গিয়ে ডেকে আনলাম ছাদে। বৃষ্টিতে ভিজে দেখলাম ওকে, একটু পর নিচে নেমে জানালা দিয়ে ওর হাতটা বাড়িয়ে দেয়া! এই মোমেন্টগুলো কিভাবে ভোলা সম্বব!)
-আবে ঐ? কি ভাবোস?
-না কিছুনা চল যাই ।
বেড়িয়ে পড়লাম বাইরে, আকাশটা একটু মেঘলা যে কোনো সময় বৃষ্টি নামতে পারে।
-এই রাস্তা দিয়ে চল।
-মামা ওরে দেখবিনা তুই?
-না ।
-ক্যান?
-ইচ্ছে নাই।
-কি হইছে তোর?
-বললাম না দেখবোনা! তোর ইচ্ছে হলে যা দেখে আয়।
(মনে হয় ওকে একটু কষ্ট দিয়ে ফেললাম, ছেলেটা শুধু ওকে দেখানোর জন্য আমায় নিয়ে আসলো আর আমি আশাটা পুরণ করলাম না। নিজেরি খারাপ লাগছিলো)
-দোস্ত মাইন্ড করিস ক্যান? তুই তো জানিস ওকে আগে যতোটা পছন্দ করতাম এখন তা করিনা। আমার এসব আর আসেনা। সরি …. চল চা খেয়ে টাউনহল এ যাই। আজ সিম্ফোনি অব হেলের একটা কনসার্ট আছে। চল আমার সোনা দোস্ত। রাগ করিস না দোস্ত আমার।
-আরে ফইন্নি তোর উপর রাগতে যামু ক্যান? আর আগে ওরে পছন্দ করতি এই ভাইবা তোরে ডাকছিলাম। আর কিছু নয়। চল এই কনসার্ট মিস দেওন যাইবোনা, সজীব নাকি পারফর্ম করবো আজ। দেখা লাগবো। চ ….
(হাটছি আমি আর কর্ন। কখনো এই গল্প আবার কখনো গল্পগুলো ডাইভার্ট করে হলিউডি মুভির চ্যাপটারে নিয়ে যাওয়া আর তার পাশাপাশি মাথায় একটাই কথা ঘুরপাক খাচ্ছে – অনুভুতিগুলো আজকাল অনেক পানসে লাগে কেনো? আসলে হয়তো ইদানিং বাস্তবতার কাছাকাছি এসে পড়ে এগুলো ভুলে যেতে শিখে নিয়েছি আর তাছাড়া ভালোলাগার মানুষ গুলোতো এমনিতেই দূরে চলে যাচ্ছে একটু একটু করে ……..। আকাশের দিকে তাকালাম …. ঘনকালো মেঘ পুরো আকাশটা ছেয়ে ফেলেছে আর এই পথ ধরে আমি হাটছি আর হাটছি একটা গন্তব্যে, জায়গাটা আমি চিনি আর সেটা আমার প্যাশন। এই জিনিসটার জন্য সব করতে পারি। আজকাল তাইতো সব ফিলিংস নিউরন সেল থেকে বাইরে ছুড়ে ফেলে দেওয়া …. রাস্তাটা বাক নিচ্ছে কিন্তু আমি হেটে চলেছি একই গতিতে …. হাটছি আর হাটছি, হাটছি আর হাটছি। হয়তো আবার কখনো দেখা হবে কোনো পড়ন্ত বিকেলে ঢলে যাওয়া সূর্যের গোধুলি বেলায় বেলিফুলের গন্ধে ঘেরা আবেগের এই জায়গাটুকুতে, সব কিছু ভুলেই আমার এই পথচলা …..)
***পীরগঞ্জ টোয়েন্টিফোরে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।***